মিস্টার জামালিঃ এতা আরো আগে জানানো উচিত ছিলো আমার কিন্তু বলা হয়ে উঠেনি ,মেয়ের বাবা হতে চলেছি আমি।
ডক্টর সানজিদঃ হ্যা মিস্টার জামালি । আপনি যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতাল এ চলে আসুন আপনার স্ত্রির ইম্মিডিয়েট অপারেশন করাতে হবে। {এ খবর শুনবার পর জামালি তৎক্ষণাৎ আল আমিন এর কাছে ছুটে গেলো}
মিস্টার জামালিঃ আল আমিন আমাকে এখন ই যেতে হবে হাস্পাতাল থেকে কল এসেছিল তোমার ভাবির অপারেশন আজকেই হতে চলেছে তো আমাকে এখন এ যেতে হবে সবাইকে একটু জানিয়ে দিও।
[দৃশ্যঃ একে অপর কে আলিঙ্গন করার পর জামালি অফিস থেকে বের হয়ে জান। গাড়ি স্টার্ট করে বসতেই কেমন যেন একটু অশ্বস্তি অনুভব করলেন কিছু না ভেবেই গাড়ি চালাতে লাগলেন যেতে যেতে অনেক রাত হয়ে যাবে পানির বোতল টা হাতে নিয়ে কি মনে হলো আবার রেখে দিলেন। হঠাৎ একটা ফোন আসল । (৮;৩৫ বাজে)]
বিশ্বজিতঃ হ্যালো জামালি ভাইয়া আপনি কি চলে গিয়েছেন রাজ ভাইয়া আপনাকে খুজছিলো ।
জামালিঃ হ্যা রে বিশ্ব আমি তো চলে এসেছি কেনো আল আমিন বলেনি তোদের আমি তো ওকে বলে আসলাম সবাইকে জানিয়ে দিতে।
বিশ্বজিতঃ কই না তো আমাকে তো কিছুই বলেনি ঠিক আছে ভাইয়া আমি রাজ ভাইয়া কে জানিয়ে দিব সাবধানে জান।
জামালিঃ হ্যালো হ্যা ফারেসি কথায় রে তোরা তোরা কি পৌছেছিস।
ফারেসিঃ হ্যা রে আমরা তো পৌছেছি তোর কি খবর আর কত দেড়ি হবে ভাবি কে তো অপারেশান থিয়েটার এ নিয়ে গিয়েছে।
জামালিঃ হ্যা রে আর বলিস না রাস্তায় জ্যাম এ পড়েছিলাম অইখানেই দেড়ি হয়ে গেলো আর বেশিক্ষন লাগবেনা । {হ্যালো হ্যালো} { নেটওয়ার্ক সমস্যার কারন এ কথা কেটে কেটে যাচ্ছে }
ফারেসিঃ হ্যালো মনে হয় নেটওয়ার্ক সমস্যা রে তোর কথা বুঝা জাচ্ছেনা । {হঠাৎ কল কেটে গেলো}
মেয়েঃ বাবু , বাবু একটু সাহায্য করেন বাবু । {একহাত দিয়ে জামালির এক হাত জাপটে ধরলো। জামালি হাতটা হ্যাচকা টান দিয়ে মেয়েটির মুখের দিকে তাকালো ঘুটঘুটে অন্ধকারের মাঝে মেয়েটির মুখ যেনো দেখাই জায়না আবছা আবছা যেটুকু দেখা জাচ্ছিলো তা দেখে আন্দাজ করা জায় মেয়েটির গায়ের রং শ্যামলা মুখখানা ফ্যাকাশে হাতে সে যে জিনিসটা ধরে ছিলো সেটা একটা বাচ্চা হয়ত কয়েক মাস হবে । জামালি মেয়েটির দিকে একবার চাইল তারপর বলে উঠল]
জামালিঃ কি হয়েছে আপনার এতো রাতে এই জায়গায় একা একা কি করছেন কোথায় জাবেন আপনি।
মেয়েঃ বাবু গো আমারে একটু চন্দারমোড় এ নামাইয়া দিবেন বাবু মোর মাইয়াডার খুব অসুখ মইরা জাইবো বাবু । {জামালি আরেকবার মেয়েটির দিকে তারপর কাপড় এ পেচানো বাচ্চাটার দিকে একবার তাকালো না আছে কোনো আওয়াজ না আছে কোনো নড়াচড়া বাচ্চাটা কি আদৌ বেচে আছে তা না দেখে সে পিছের দড়জাটা খুলে দিলো মেয়েটি উঠে বসল।}
মেয়েঃ বাবু দেখুন না আমার মেয়েটা কেমন চুপ্টী মেরে শূয়ে আছে মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে আর বোধহয় কান্নাকাটি করবেনা বাবু। [ বলতে বলতে সে একবার কোলে শিশূটির দিকে আবার জামালির দিকে তাকাচ্ছে ।]
জামালিঃ এসব কি । কোন ধরনের প্যাঙ্ক নাকি তুমি কি আমাদের অফিস কেও দেখি { জামালি হাত দিয়ে মুখথেকে ঘোমটাটা সরাতেই মেয়েটি যেনো ভ্যানিস হয়ে গেলো জামালি পিছে তাকাতেই দেখতে পেলো মেয়েটি পিছের সিট এ বসা হাত দিয়ে বাচ্চাটির শরির থেকে কাপড় একটু একটু করে খুলে ফেলছে। আর একটা বাজে পচা গন্ধ পুরা গাড়ীতে ছড়িয়ে পড়ল গাড়ীর কন্ট্রল ধিরে ধিরে জামালির হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। একটূ পর জামালি যা দেখল তা দেখে আর বুঝতে বাকি রইলনা জে কিসের পাল্লায় পরেছে সে। মহিলাটি নড়খাদকদের মতো তার হাতের শিশুটিকে খাওয়া শুরু করেছে। এটা দেখে জামালি কি করবে কিছু ভেবে না পেয়ে দড়জা খুলার চেষ্টা করতে লাগল কিন্তু দরজা গুলো যেনো মড়ার মতো শিটকে লেগে গেছে। জামালি ঘুরে পাশে তাকাতেই দেখল মেয়েটি তার পাশেই বসা মুখ থেকে কি বীভৎস দুর্গন্ধ আর রক্ত গড়িয়ে পরছে একহাতে বাচ্চাটার আধাখাওয়া শরির তার থেকেও রক্ত অঝোরে বেরিয়ে জামালির পা ভিজিয়ে দিচ্ছে জামালি চোখদুটো এক মুহুর্তের জন্য বন্ধ করলো। মেয়েটি আস্তে করে পাশের সিট এ বসে বিড়বিড় করে কি সব বলতে লাগল। জামালি প্রথম এ কিছুই বুঝতে পারলোনা মেয়েটির দিকে তাকাতেই আবার চমকানোর পালা মেয়েটি ঠিক গাড়িতে উঠার আগে যেমন ছিলো তেমনটা হয়ে গেছে কোথাও রক্ত নেই একফোটা হাতে বাচ্চাটি ঠিক আগের মতো কাপড় এ মোড়ানো , হঠাৎ মেয়েটি বলে উঠল ]
মেয়েঃ বাবু মেয়ে কে দেখতে যাচ্ছেন বুঝি ? {কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর জামালি কি উত্তর দিবে না বুঝে হঠাৎ বলে উঠল}
জামালিঃ মেয়ে {জামালি যেনো সব হুশ হারিয়েছে মেয়ে শব্দটি শুন্তেই যেনো তার হুশ ফিরলো}। {মেয়েটি আবার কথা বলা শুরু করলো}
মেয়েঃ বাবু আমার নাম কমিলা চন্দারমোড় বাজারে ছিলো আমার বাড়ি যেখানে ছিলাম আমি আমার মেয়ে আর আমার স্বামী ৩ জন এর ছোট্ট সংসার । আপনি জানতে চাচ্ছিলেন না যে কি হয়েছে আমার স্বামীর সে কেনো আমাদের সাথে নেই মজার জিনিস টা হলো সে যে আমাদের সাথে নেই তার পিছে দোষটা তো আপনারই ।
জামালিঃ কি সব আজেবাজে বলছ তোমাকে তো আমি চিনিও না আর আমার কারোনে তোমার স্বামির মৃত্য হতে যাবে ক্যানো।
কমিলাঃ বাবু মাত্র কিছু টাকা ঋণ নেয়ার জন্য গতবছর আপনাদের অফিস এ গেছিলো আমার স্বামি। সংসার এর জাচ্ছেতাই অবস্থা না খেতে পেরে আমার বাচ্চাটার প্রান প্রায় জায় জায় একটুকু সাহায্য সেদিন আপনাদের কাছ থেকে পেলে আজ আমাদের এই অবস্থা হতোনা । আপনাদের মতো মানুষের জন্য আমাদের মতো মানুষের জীবন প্রদীপ ধুকে ধুকে নিভে জায় তাতে কি আপনাদের কিছু আসে জায় বাবু। সেদিন আপনারা আমার স্বামী কে সাহায্য না করে উলটো যা নয় তাই বলে অপমান করে তারিয়ে দিলেন সে যে আর বাড়ি ফিরে আসেনি বাবু এসেছিলো তার লাশ। অসুস্থ মেয়েটাকে নিয়ে কোথায় যাবো একলা কি করব ভাবতে ভাবতে জীবন এর মানেটাকেই হাড়িয়ে ফেলেছিলাম বাবু।
কমিলাঃ ওইদিন রাতেই ঘরে আগুন দিয়ে মরেছি বাবু আহ কি কষ্ট বাচ্চা মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখদুটো কখন যে দেখার ক্ষমতা হারিয়েছে আর টের পাইনি।
বৃদ্ধঃ কি হে বাছা ঠিক আছো তো?
জামালিঃ হ্যা কাকু { মাথা টা ধরে একটু বসে পরল জামালি, বৃদ্ধ লোকটি বলে উঠল}
বৃদ্ধঃ দেখে শুনে গাড়ি না চালালে তো এভাবেই কবে প্রান টা দিবে । তা কোথায় যাচ্ছিলে এই ভোর বেলায়?
জামালিঃ হাসপাতাল । { কথাটা বলে জামালি গাড়ির ভিতর থেকে পানির বোতল টা বের করে হাতে মুখে পানি দিয়ে কুল্কুচি করে পানিটা ফেলতে যাবে এমন সময় তার চোখে পরে একটা ছোট পিলার এর মতো কিছু একটা গাড়া জেটার সাথে তার গাড়ি আটকেছে। জামালি বৃদ্ধ কে জিজ্ঞ্যাসা করে }
জামালিঃ কাকু এই রোডের ধারে এভাবে এটা কি পুতে রেখেছে?
বৃদ্ধঃ ও ওটা আর বলোনা কয়েক মাস আগে আমাদের গ্রাম এ একটা দুর্ঘটনা হয় এক বাড়িতে আগুন লেগে মা মেয়ে দুজোন মারা যায় তাদের ত কিছুই ছিলোনা তো গ্রাম এর সবাই সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের এইখানেই দাফন করা হয়।
জামালিঃ আপনি ওই গ্রাম এই থাকেন বুঝি । {লোকটি ইশারায় সম্মতি জানালো}
ফারেসিঃ হ্যালো জামালি কিরে কই তুই সব ঠিক আছে তো সারা রাত আর তোর ফোনে ফোন ই ঢুকছিলো না ।
জামালিঃ একটূ সমস্যার মদ্ধ্যে পড়েছিলাম রে অইখানে পৌঁছে সব বলব তোর ভাবির কি অবস্থা।
ফারেসিঃ এখানে সব ঠিক ঠাক আছে তারাতারি চলে আয় আমরা সবাই ওয়েট করছি ।
Za EndO